Jadavpur, Kolkata. 14 January 2013. Nazrul Fakir

Listen to a song from this session
Artist:
Nazrul Fakir
Composer:
Lalon Sai
Form:
Baul
Song region:
Kushtia







We became friends with Nazrul Fakir of Kushtia in our home in Kolkata in the winter of 2012. He first came as our friend Satyaki’s friend. Slowly he started to come on his own; perhaps he felt an affinity. Those days Sudipto was doing his play on Lalon. Nazrul performed in it. So he had to keep crossing the border at Benapole, and that was not so easy. So once the trial of border-crossing was over, he had to find his places of comfort. In his own quiet way, he had made his own friends.

Once he came to us straight from Sealdah station. He brought us a CD of Mamun Nadia, a singer who had inspired him. He would stand on the bank of the Garai river and listen to music coming from the boats. Once they were playing a cassette of Mamun Nadia, a Lalon song, he said, and he felt deeply moved. He wanted to gift us that experience.

Nazrul wanted to take a gift home to his family. He is a man of very few words. But he confided in Sukanta. He said, at home, they don’t know what I do, what I sing. I go to all these places–London, Berlin, Bangalore–but they don’t know what I do. Could you please make me a CD of my songs so I can go home and play for them?

Sukanta’s recording and his note capture the essence of Nazrul. There is nothing more to say. You meet the man in his song. He is what you hear, not an inch less; perhaps more.

tta
Nazrul Fakir

নজরুল ফকির কলকাতায় আসেন লালন-গবেষক, অভিনেতা সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় ও নাট্যপরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়ের নাটক, Man of the Heart -এ কাজ করার সূত্রে। আমাদের বন্ধু, শিল্পী সাত্যকি বন্দোপাধ্যায়ও এই প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে সাত্যকির সঙ্গে নজরুলের সখ্য ও সেই সূত্রে আমাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও বন্ধুত্ব। নজরুল কুষ্টিয়ায় থাকেন। লালন সাঁই-এর মাজারের কাছেই। রব ফকিরের শিষ্য নজরুলের স্বভাবটি খুব মিঠে আর ঠান্ডা। কোথাও কোন কিছুর উপর জোর আরোপ করেন না। পাশের ঘরে নজরুল থাকলে বোঝাই যায় না ঘরে কেউ আছেন।
গল্প শুনেছি, ভারতীয় রাগসঙ্গীতের অন্যতম দিকপাল শিল্পী উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁ সাহেবের বাড়িতে কেউ এলে, দু’একটা কথাবার্তার পরেই খাঁ সাহেব বলতেন, “এবার ইজাজত দিলে দু’একখানা গান শোনাই”। হয়ত বিশ্বাস করতেন তাঁর আর মানুষকে কি দেবার থাকতে পারে, তাই নিজের গান দিয়েই অতিথি আপ্যায়ন সারতেন!

আমাদের বন্ধু নজরুল ফকিরের মধ্যেও এই ভাবটি লক্ষ করেছি। নজরুলকে বিশেষ বলতে হয় না গানের ব্যাপারে; আর আড্ডায় নজরুলও অন্য কোন প্রসঙ্গে বিশেষ কিছুই বলেন না। খানিকক্ষণ চুপ করে অন্যদের বকবক শুনে, দু’একটান তামাক সেবা করে একতারায় সুর বাঁধতে থাকেন। তারপরে একফাঁকে অনুমতি নেবার সুরে বলে ওঠেন, “এবার দু’একখান পদ গাই”? আমরা হইহই করে উঠি। নজরুল একটানা গাইতে থাকেন। খান-চারপাঁচ গান অন্তত না গেয়ে নজরুলকে বিড়ি-বিরতিও নিতে দেখিনি। একবার বিড়ি খেয়ে আবার গাইতে থাকেন বিরতিহীন ভাবে। মাঝে মাঝে আবার শুধোন, “বিরক্ত করছি নাকি”!

সাঁইজির যেসব গানে দীন ভাবের প্রকাশ, যেখানে গুরুর প্রতি বা পরম করুণাময়ের প্রতি তাঁর শর্তহীন, সর্বাঙ্গীণ আত্মনিবেদন, সেইসব গান নজরুলের গায়কীতে ভারি সুন্দর খোলে। একতারা ও ডুগি সহযোগে যে শব্দজগত তিনি সৃষ্টি করেন, সাধারণভাবে দেখলে তা ভীষণভাবেই কুষ্টিয়ার নিজস্ব। সেদিক থেকে নজরুল হয়ত কোন ইউনিক সাউন্ড পেশ করছেন না শ্রোতার কাছে। কিন্তু পদ অনুযায়ী গায়কের ব্যক্তিসত্তার ছাপ তো গানের উপর পড়ে। নজরুলের সত্তায় ওই করুণ ও দীন ভাবটি এমন ওতপ্রোত জড়িত, ফকির যখন গেয়ে ওঠেন, “দেখে ভব নদীর তুফান, ভয়ে প্রাণ কেঁদে ওঠে/ এসো দয়াল পার করো…”; অথবা, “ও মেঘ হইল উদয়, লুকালো কুথায়/ পিপাসিত প্রাণ যায় পিপাসায়/ আমায় দাও হে দুঃখ যদি, তবু তুমায় সাধি/ তুমি না তরাইলে কে তরাবে আমায়”, তখন ওই তৃষ্ণার্ত প্রাণের হাহাকারটি আমাদের বুকে বাজে। ক্ষীণতনু ফকিরের জোর সেইখানে। আর কোথাও যে ফকির জোর খাটাতে পারেন না বোঝাই যায়। কোন উটকো লোকের অনুরোধে(না আদেশে সাঁইজিই জানেন) নিজের ছোট্ট থলি বোঝাই করে “ভারত” থেকে সাবান, পাউডার আর ম্যাগি নুডলস কিনে নিয়ে যান! ভয় পেতে থাকেন বর্ডারে কেউ কিছু বলবে কিনা সেই নিয়ে। এসব কোথায় কিনবেন, আমাদের জিজ্ঞেস করেন সসংকোচে।

সংসার পালনের জন্য নজরুল রঙ-মিস্ত্রীর কাজ করেন। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে লোকের বাড়ি রঙ করে বেড়ান।
মহাজ্ঞানী সন্ত কবীর তাঁর পদে বলেছেন, “সাহেব হ্যায় রংরেজ, চুনরী মোরি রংগ ডারি/ স্যাহী রংগ ছুড়ায়কে রে দিয়ো মজীঠা রংগ”।
রজকরূপে তিনি/ রাঙিয়ে দিলেন/ এ অবগুন্ঠন।
সব রঙ ধুয়ে/ উজ্জ্বল করো/ আমার প্রেমের রঙ।

কবীরের বহু পদেই তিনি পরম করুণাময়কে রজকরূপে কল্পনা করেছেন। প্রেমের রঙে ডুবে যাবার আর্তি জানিয়ে এই পদেই বলছেন, “সব কুছ উন পর বার দুঁ রে, তন মন ধন আউর প্রাণ”। দেহ মন ধন প্রাণ সর্বস্ব তাঁকে সমর্পণ করলাম।

কাপড় রাঙানোর কাজ তো আজকাল উঠেই গেছে। আমাদের ঘরবাড়ি রাঙানোর দায় তাঁর ভাবশিষ্যের ঘাড়ে হয়ত স্বয়ং সাঁইজিই চাপিয়েছেন! আমাদের অবিশ্বাসী মন এটুকু বিশ্বাস করতে ভালবাসে।

Written in 2014.

Related link

Sahib Hain Rangrez by Shubha Mudgal